ভারতীয় দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ চাণক্য এর জীবনী

Channoka life history and Biography Of Chanakya


ইতিহাসে যে কজন প্রাচীন পণ্ডিত অমর হয়ে আছেনতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন চাণক্য এই উপমহাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বে তাকে অন্যতম প্রাচীন এবং বাস্তববাদী মহাপণ্ডিত মনে করা হয় মহাকবি কালিদাস যুগেরও অনেক আগে আবির্ভূত এই পণ্ডিত তার সময়ে থেকেই ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিলেন লিখে গেছেন অমর সব তত্ত্বগাথা
যিনি চাণক্য তিনিই কৌটিল্য
চাণক্য [খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০ থেকে ২৮৩ অব্দছিলেন প্রাচীন ভারতের পণ্ডিতদার্শনিক  রাজ উপদেষ্টা প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রাচীন তক্ষশীলা বিহারের অর্থনীতি  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ছিলেন মৌর্য রাজবংশের প্রথম রাজা চন্দ্রগুপ্তের রাজক্ষমতা অর্জন  মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য দার্শনিক প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত এই অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষটির জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশীলায়যেখানে উপমহাদেশে উচ্চতর জ্ঞান আহরণের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপীঠ অবস্থিত ছিল রাজনৈতিক দর্শনের বাস্তব চর্চা  রাষ্ট্রীয় কৌশলের প্রয়োগপদ্ধতির নির্দেশনা দানে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসে তার অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী মহাজ্ঞানী চাণক্যের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল বিষ্ণুগুপ্ত  ছাড়া তার বিখ্যাত ছদ্মনাম ‘কৌটিল্য আবার কারও কাছে তার নামই বিষ্ণুগুপ্ত কৌটিল্য নামেই তিনি সংস্কৃত ভাষার অমরগ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ লিখে গেছেন রাষ্ট্রশাসন  কূটনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা শাস্ত্র মানা হয় যেহেতু তিনি ‘কুটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভূত ছিলেন তাই সেটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন অন্যদিকে তার সবচেয়ে পরিচিত  প্রিয় নাম ‘চাণক্য’ এর উদ্ভব ‘চানকা’ থেকে চানকা হচ্ছে তার গ্রামের নাম এই গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন মতান্তরে তার পিতার নাম ‘চানক’ থেকে ‘চাণক্য পণ্ডিত’ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত হয়ে ওঠেন চাণক্য তাকে বিষ্ণুগুপ্ত নামেও ডাকা হয়
 চূড়ান্ত পাণ্ডিত্য
চাণক্য কী পরিমাণ জ্ঞানী  পণ্ডিত ছিলেন তার শাস্ত্র পড়লেই সে সম্পর্কে একটি ধারণা করা যায় তিনি একাধারে একজন শিক্ষকলেখকদার্শনিকশাসক এবং কূটনীতিবিদ ছিলেন তার সমাজ  জীবন সম্পর্কিত বক্তব্যগুলো আজকের আধুনিক জীবনেও সমানভাবে প্রযোজ্য তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্তা তার ‘অর্থশাস্ত্র’ (Arthashastra) গ্রন্থে তিনি চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন একটি রাষ্ট্র কীভাবে গড়ে ওঠে এবং পরিণতি লাভ করে তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন কীভাবে একজন শাসককে নিজস্ব ভূখণ্ডের সীমানা পেরিয়ে আরও ভূখণ্ড  মূল্যবান সম্পদ নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে হয় একইভাবে সম্পদ  সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে তার প্রজাদের নিরাপত্তাকল্যাণ  জীবনমান উন্নত করার জন্য কী কী কাজ করা যেতে পারেসেসব বিষয়ও পুঙ্খানুপুঙ্খ লিপিবদ্ধ করেন চাণক্য তার অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি নামে অর্থশাস্ত্র হলেও এটি মূলত শাসকের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রশাসন  কূটনীতিবিষয়ক কৌশলের পরামর্শ আর তৎকালীন সময়ের রাজা-মহারাজারা তাদের রাজদরবারে এরকম একজন দুজন পণ্ডিতকে সব সময়ই প্রাধান্য দিতেন কাজেই জ্ঞানের ক্ষেত্রে এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে এসব পণ্ডিতের দারুণ ভূমিকা ছিল সেই অর্থে বলা যেতেই পারে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পরবর্তীকালের রাজাদের রাষ্ট্র পরিচালনা  জনকল্যাণমূলক রাজ্য গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিতে সমর্থ হয়েছিল এর প্রমাণ পরবর্তী সময়ের প্রজাবৎসল শাসকদের রাজ্যশাসন  রাজ্য পরিচালনা নীতি স্পষ্টতই তাদের সেই সময়ের শাসনে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বড় একটি ছাপ পড়েছে চাণক্য-সহায়তায় মৌর্যশাসন প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ২৪ বছর শাসনকাল যেমন বর্ণিল ছিলতেমনি দ্বিতীয় প্রজন্ম বিন্দুসারার সমৃদ্ধিময় জনপ্রিয়তার পেছনেও ছিল চাণক্যের অবদান
চাণক্যের ভালো থাকার  সূত্র
সার্বিক প্রয়োজনে অনেক বিষয় নিয়েই লিখেছেন চাণক্য কিন্তু মানুষ মাত্রই ভালো থাকতে চায় ভালো থাকার জন্য চাণক্য কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন
টাকা-পয়সার নিদারুণ সংকট থাকলে কাউকে কখনো বলতে নেই কারণ  সময় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাআবার কপট সাহায্যের আশ্বাস দেয় কারণ তার মতে দরিদ্ররা সমাজে তেমন মর্যাদা পায় না তাই তাদের নিজের সম্পদ নিজের কাছেই রাখা উচিত
মহামতি চাণক্যর মতে ব্যক্তিগত সমস্যা কখনো কাউকে বলতে নেই যারা বলে তারা অন্যের কাছে নীচু  বিরক্তিকর হিসেবে গৃহীত হয়আড়ালে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে নিজের স্ত্রী সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে নেই এসব বললে মানুষ মনে করে কিছু একটা অভিপ্রায় নিয়ে তা বলা হচ্ছে যা পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর ফল নিয়ে আসতে পারে জ্ঞানী ব্যক্তির মতো মৃত্যু পর্যন্ত তা নিজের কাছে রেখে দেওয়া উচিত
যদি কখনো নীচপদস্থ ব্যক্তি দ্বারা অপমানের স্বীকার হওয়া যায়তাহলে তা অন্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করাটাই ভালো তাহলে মানুষ বক্তার সামনেই তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে পারে ফলে তা মর্যাদা  আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে
আদর দেওয়ার অনেক দোষশাসন করার অনেক গুণ তাই পুত্র  শিষ্যকে শাসন করাই দরকারআদর দেওয়া নয় পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে১০ বছর অবধি তাদের চালনা করবে১৬ বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করবে পুত্রকে যারা পড়ান নাসেই পিতা-মাতা তার শত্রু একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করেসব তারা মিলেও তা পারে না তেমনি একটি গুণী পুত্র একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে ভালো

নীতির দর্পণ সারাংশ
চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী হওয়ার পর প্রাসাদের জীবন ছেড়ে কুঁড়েঘরের সন্ন্যাসী জীবন বেছে নিয়েছিলেন চাণক্য সেখানে শিষ্যদের নানা বিষয়ে  নৈতিক  আর্থ-সামাজিক বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এসব বিষয়ের কিছু কিছু তার অন্যান্য বিবরণীতে সংগৃহীত হয়েছে  ধরনের একটি সংকলন- ‘চাণক্য নীতি দর্পণ চলুন দেখে নেওয়া যাক চাণক্যের নীতির  দর্পণ সারাংশ
যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন না এবং শুধু অভিযোগ করেন যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছেতাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত
সব উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর সে জন্য সবচেয়ে  বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে তহবিল তছরুপ বা অর্থ আত্মসাতের ৪০টি পদ্ধতি আছে জিহবার ডগায় বিষ রেখে যেমন মধুর আস্বাদন করা সম্ভব নয়তেমনি কোনো রাজকর্মচারীর পক্ষে রাজার রাজস্বের সামান্য পরিমাণ না খেয়ে ফেলার ঘটনা অসম্ভব ব্যাপার জলের নিচে মাছের গতিবিধি যেমন জল পান করে বা পান না করেও বোঝা সম্ভব নয়অনুরূপ রাজকর্মচারীর তহবিল তছরুপও দেখা অসম্ভব আকাশের অতি উঁচুতেও পাখির উড্ডয়ন দেখা সম্ভবকিন্তু রাজকর্মচারীর গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সমভাবে অসম্ভব
বিষ থেকে সুধানোংরা স্থান থেকে সোনানীচ কারও থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী এসব গ্রহণ করা সংগত
মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয় এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত
যারা পরিশ্রমীতাদের জন্য কোনো কিছুই জয় করা অসাধ্য কিছু নয় শিক্ষিত কোনো ব্যক্তির জন্য কোনো দেশই বিদেশ নয় মিষ্টভাষীদের কোনো শত্রু নেই
বিরাট পশুপালের মাঝেও শাবক তার মাকে খুঁজে পায় অনুরূপ যে কাজ করে অর্থ সব সময় তাকেই অনুসরণ করে
মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন

মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা
চাণক্যের উত্থান কিংবদন্তি গল্প হলেও ঐতিহাসিক সত্যতা আছে বলেই মানেন অধিকাংশ ঐতিহাসিক সে সময় মগধ রাজ্যের পরাক্রমশালী নন্দ বংশের শেষ রাজা ছিলেন ধনানন্দ তিনি ন্যায়বিচারক ছিলেন না তার অন্যায় শাসনের জন্য প্রজাদের কাছে দারুণ অপ্রিয় ছিলেন এই ধনানন্দ একবার চাণক্যকে অপমান করেন ধনানন্দের পিতৃশ্রাদ্ধে পৌরহিত্য করার জন্য একজন ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়লে ধনানন্দের মন্ত্রী শকটা ব্রাহ্মণ খোঁজার দায়িত্ব নেন তিনি চাণক্যকে ধনানন্দের পিতৃশ্রাদ্ধের পুরোহিত হওয়ার অনুরোধ জানান সে অনুযায়ী চাণক্য যথাসময়ে রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হয়ে পুরোহিতের আসন গ্রহণ করেন চাণক্যের চেহারা তেমন ভালো ছিল না পুরোহিতের আসনে কদাকার ব্রাহ্মণ চাণক্যকে দেখে মহারাজ ধনানন্দ গেলেন রেগে অযথাই চাণক্যকে তিরস্কার করে বের হয়ে যেতে বলেন চাণক্য প্রথমে মহারাজাকে হিতবাক্যে বুঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু রাজা ধনানন্দ কিছু না শুনে উল্টো অন্যদের দিয়েও চাণক্যকে অপমান করেন এবার ক্রুদ্ধ হলেন চাণক্য সেখান থেকে চলে আসেন এবং এই অপমানের প্রতিশোধ  নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন অন্যদিকে রাজা ধনানন্দের সত্ভাই (পিতা মহাপদ্মের ঔরসে দাসী ‘মুরা গর্ভজাতপদস্থ  উচ্চাভিলাষী তরুণ সামরিক কর্মকর্তা চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসন দখলের পরিকল্পনা করছিলেন কারণ পিতা মহাপদ্মের মৃত্যুর পর রাজা ধনানন্দ দাসীমাতা মুরা  সত্ভাই চন্দ্রগুপ্তকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন অপমানিত চন্দ্রগুপ্ত তাই  ধনানন্দকে পরাজিত করে মগধের সিংহাসন দখলের চেষ্টা করেন কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে প্রাণ বাঁচাতে তাকে বিন্ধালের জঙ্গলে পলাতক  নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয় তখনই  ঘটনাচক্রে চাণক্যের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাৎ ঘটে এই সাক্ষাৎ যে ইতিহাসের বাঁক বদলে দেবে কে জানত?
চাণক্য চন্দ্রগুপ্তের প্রতিশোধপরায়ণতা আর সিংহাসনের বাসনাকে কাজে লাগাতে চাইলেন অন্যদিকে চন্দ্রগুপ্তও চাণক্যের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হলেন ফলে চন্দ্রগুপ্ত তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য চাণক্যকে গুরুউপদেষ্টা  মন্ত্রণাদাতা হিসেবে স্বীকার করেন এরপর চাণক্যের সক্রিয় সহযোগিতায় চন্দ্রগুপ্ত একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে পরিকল্পনাকে আরও বেশি নিখুঁত করে তোলেন চাণক্য চাণক্যের পাণ্ডিত্য আর চন্দ্রগুপ্তের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত সিংহাসনচ্যুত হলেন নন্দরাজা মগধের সিংহাসনে আরোহণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা  করেন এই বংশই পরবর্তীতে ভারতীয় ইতিহাসে শক্তিশালী মৌর্য সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয় আর এই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যেরই দ্বিতীয় পুরুষ হচ্ছেন বিন্দুসারা এবং তৃতীয় প্রজন্ম আরেক প্রতাপশালী শাসক সম্রাট অশোক তিনিও ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন
বৈচিত্র্যময় জীবন
চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে আরোহণ করার পর পাটালিপুত্রকে তার রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন এই পাটালিপুত্র বিহারের আধুনিক শহর পাটনার কাছেই অবস্থিত ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৯৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্রগুপ্ত রাজ্য শাসন করেন তার সময়কালে রাজ্যজুড়ে শান্তি বিরাজমান ছিলপ্রজাদের প্রতি তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ এবং রাজ্য বিকশিত হয়েছিল সমৃদ্ধিতে  সম্পর্কে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে গেছেন চন্দ্রগুপ্তের দরবারে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তার ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে চাণক্য তার জীবদ্দশায়এমনকি মৃত্যুর পরও ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়  পণ্ডিত হিসেবে সর্বজনশ্রদ্ধেয় একটি অবস্থান ধরে রেখেছেন টিকে আছেন তার কর্মবহুল জীবনের কর্ম  সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মজীবনের শুরুতেই  তিনি পাঞ্জাবকে বিদেশি শাসনমুক্ত করতে রাজাকে সাহায্য করেন এরপর অযোগ্য শাসক নন্দ রাজাকে উত্খাত করে চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের সঙ্গে আরও রাজ্য যুক্ত করেন এবং সাম্রাজ্যে শান্তিসমৃদ্ধি  ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার ভূমিকা পালন করেন কেবল চন্দ্রগুপ্তের আমলই নয়পরবর্তীকালের ভারতীয় সম্রাটদের শাসন কৌশলে দারুণভাবে প্রভাব পড়ে চাণক্য নীতির এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে মৌর্য বংশের তৃতীয় শাসক সম্রাট অশোকের শাসন এই সময়টি এতটাই পরিশীলিত ছিল যে বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামেও প্রাচীন  গভীর ঐতিহ্যবাহী অশোক-স্তম্ভের উপস্থিতি রয়ে গেছে
এমনকি এরও পরে বিক্রমাদিত্যের শাসনকালের কিংবদন্তীয় উপকথাগুলোর জনপ্রিয় লোকভাষ্য থেকেও তা ধারণা করা যায় হয়তো এই বিজ্ঞ  বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন দার্শনিক ধর্মনীতিশাস্ত্রসামাজিক আচরণ  রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করেছেন চাণক্যের কথাগুলো আধুনিক যুগের পরিশীলিত কথাবার্তা থেকে ভিন্ন হলেও আজকের দিনেও ঠিক একই তাৎপর্য বহন করে
এরকম জ্ঞানী একটা মানুষ কিন্তু শারীরিকভাবে খুব একটা সবল ছিলেন না দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি তবে সব ছাপিয়ে এই বিজ্ঞ  বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন পণ্ডিতের সমাজসংসারধর্মরাজনীতিঅর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কিত নীতি কথাগুলো হাজার বছর পরেও গুরুত্ব হারায়নি
 প্রাসাদ ছেড়ে শ্মশানের জীবন
মগধের সিংহাসনে চন্দ্রগুপ্ত আরোহণের পর যথারীতি চাণক্যের সম্মান-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেল অনেকগুণ গুরু এবং নির্ভরযোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে  জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদে বিলাসবহুল জীবনযাপনের অবারিত সুযোগ পেলেন চাণক্য কিন্তু ওসবে কী আর পণ্ডিতের মন ভরেকথিত আছেএমন বিলাসী জীবনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চাণক্য শ্মশানবর্তী খুব সাধারণ একটি কুঁড়েঘরে নির্মোহ সন্ন্যাস জীবনযাপন করতেন ওখানে থেকেই বিশ্বস্ততার সঙ্গে রাজপ্রদত্ত দায়িত্বপালন করতেন পাশাপাশি সেখানেই নিজের শিষ্যদের রাজ্য পরিচালনা  নৈতিকতার শিক্ষা দিতেন চাণক্যের সেই নীতি আর দর্শন হাজার বছর পরও আধুনিক এর বাইরে অসাধারণ দক্ষ পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চাণক্যের খ্যাতি অসাধারণ সিদ্ধান্তে অটলস্বভাবী চাণক্যের কাছে আবেগের কোনো মূল্য ছিল না নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন  তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর

 স্ত্রী নাকি টাকাজেনে নিন চাণক্য নীতি

 স্ত্রী নাকি টাকাযদি যেকোনো একটি বাছাই করতে বলা হয়তাহলে আপনি কোনটি বাছাই করবেনচাণক্য নীতির দর্পণের প্রথম অধ্যায়েই  ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। টাকা-পয়সা সঞ্চয়ের পরামর্শ দিয়েছেন চাণক্য। কারণবিপদে অর্থই কাজে আসে। 
কিন্তু স্ত্রী  টাকার মধ্যে কাকে বাছাই করবেনচাণক্য বলেছেনস্ত্রীকে বাছাই কারই বুদ্ধির পরিচয় ধর্ম  সংস্কার স্ত্রীর মধ্যে থাকে তিনিই পরিবারের রক্ষা করেন স্ত্রী ছাড়া ধর্ম  কর্ম অসম্পূর্ণ স্ত্রী ছাড়া গৃহস্থ আশ্রমও সম্পূর্ণ হয় না
তবে যখন নিজের আত্মাকে বাঁচানোর প্রশ্ন আসবে তখন স্ত্রী  টাকার মায়া ছাড়তে হবে অর্থাত্ মায়া-মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নিতে হলে স্ত্রী  অর্থ ত্যাগ করতে হবে তখনই আত্ম্যার সঙ্গে সংযোগ ঘটবে পরমাত্মার 
চাণক্য শ্লোক
বাস্তববাদী চাণক্যের অর্থনীতিরাজনীতিজীবনযাপন ইত্যাদি নিয়ে বলা কথাগুলো ‘চাণক্য শ্লোক’ নামে পরিচিত সূদীর্ঘ আড়াই বছর পরেও কথাগুলোর গুরুত্ব হারিয়ে যায়নি কথিত হয় যেএখনো ভারতের রাজনীতি অনেকাংশে চাণক্যনীতি অনুযায়ী চলমান চাণক্যের নীতি পৃথিবীর বহুভাষায় অনূদিত হয়েছে প্রশংসিত হয়েছে বহু দেশে হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তার নীতি এখনো সমানভাবে কার্যকর সেখান থেকেই কয়েকটি শ্লোক দেখে নেওয়া যাক
  দুর্বলের বল রাজাশিশুর বল কান্নামূর্খের বল নীরবতাচোরের মিথ্যাই বল
 দুষ্ট স্ত্রীপ্রবঞ্চক বন্ধুদুর্মুখ ভৃত্য এবং সসর্প-গৃহে বাস মৃত্যুর দ্বার বিষয়ে সংশয় নেই
 পাপীরা বিক্ষোভের ভয় করে না
 আকাশে উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়কিন্তু প্রচ্ছন্ন প্রকৃতি-কর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়
 অতি পরিচয়ে দোষ আর ঢাকা থাকে না
 অধমেরা ধন চায়মধ্যমেরা ধন  মান চায় উত্তমেরা শুধু মান চায় মানই মহতের ধন
 অনেকে চারটি বেদ এবং ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে নাহাতা যেমন রন্ধন-রস জানে না
 অন্তঃসার শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় নামলয়-পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না
 আপদের নিশ্চিত পথ হলো ইন্দ্রিয়গুলোর অসংযমতাদের জয় করা হলো সম্পদের পথযার যেটি ঈঙ্গিত সে সে পথেই যায়
 আড়ালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়কিন্তু সামনে ভালো কথাযার উপরে মধু কিন্তু অন্তরে বিষতাকে পরিত্যাগ করা উচিত
 গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেনতবে পৃথিবীতে এমন কোনো জিনিস নেইযা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে
 অবহেলায় কর্মনাশ হয়যথেচ্ছ ভোজনে কুলনাশ হয়যাঞ্চায় সম্মান নাশ হয়দারিদ্র্য বুদ্ধিনাশ হয়
 অভ্যাসহীন বিদ্যাঅজীর্নে ভোজনদরিদ্রের সভায় বা মজলিশে কালক্ষেপণ এবং বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা বিষতুল্য
 ধর্মের চেয়ে ব্যবহারই বড়
 বিনয়ই সবার ভূষণ
 বষ থেকেও অমৃত আহরণ করা চলেমলাদি থেকেও স্বর্ণ আহরণ করা যায়নীচজাতি থেকেও বিদ্যা আহরণ করা যায়নীচকুল থেকেও স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করা যায়
 ভাগবাসনায় বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়
 মিত ভোজনেই স্বাস্থ্যলাভ হয়
 ইন্দ্রিয়ের যে অধীন তার চতুরঙ্গ সেনা থাকলেও সে বিনষ্ট হয়
 উপায়জ্ঞ মানুষের কাছে দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য
 ঋণঅগ্নি  ব্যাধির শেষ রাখতে নেইকারণ তারা আবার বেড়ে যেতে পারে
 একটি মাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুলধন্য হয়
 একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণীপুত্র বরং ভালো একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করেসব তারা মিলেও তা পারে না
 একটি দোষ বহু গুণকেও গ্রাস করে
 একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়
 উৎসবেবিপদেদুর্ভিক্ষেশত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালেরাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকেসে- প্রকৃত বন্ধু
 কর্কশ কথা অগ্নিদাহের চেয়েও ভয়ঙ্কর
 খেয়ে যার হজম হয়ব্যাধি তার দূরে রয়
 গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়
 গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন
 অহংকারের মতো শত্রু নেই
 তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয় : নিজের পত্নীতেভোজনে এবং ধনে কিন্তু অধ্যয়নজপআর দান এই তিন বিষয়ে যেন কোনো সন্তোষ না থাকে
 দারিদ্র্যরোগদুঃখবন্ধন এবং বিপদ-সব কিছুই মানুষের নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল
 দুর্জনের সংসর্গ ত্যাগ করে সজ্জনের সঙ্গ করবে অহোরাত্র পুণ্য করবেসর্বদা নশ্বরতার কথা মনে রাখবে

চাণক্য নীতি কি মেয়েদের ক্রীতদাসী হিসেবে দেখেছিল?

নিজস্ব প্রতিবেদন |  অগস্ট২০১৬১৬:২৩:২৭ | শেষ আপডেট অগস্ট২০১৬১৯:৩৪:৫৮

গার্গীলোপামুদ্রাঅপালাবিশ্ববারা প্রমুখ বিদূষীর উদাহরণ তুলে সেই কথা প্রমাণ করেও দেন বই-লেখকরা। কিন্তু ইতিহাসের ছাত্ররা অনার্স স্তরে গিয়েই জানতে পারেনসেকালে মোটেই নারীরা সম্মানজনক কোনও অবস্থানে ছিলেন না।


প্রাচীন বারতে নারী কতটা বন্ধনে ছিলজানায় ‘চাণক্য নীতি

প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান বিষয়ে প্রসঙ্গ উঠলে খানিকটা ধন্ধে পড়ে যেতে হয়। স্কুল জীবনে ভারতের ইতিহাস পড়তে গিয়ে জানতে হয়েছিলপ্রাচীন কালে এদেশে নারীর স্থান ছিল খুবই উচ্চে। গার্গীলোপামুদ্রাঅপালাবিশ্ববারা প্রমুখ বিদূষীর উদাহরণ তুলে সেই কথা প্রমাণ করেও দেন বই-লেখকরা। কিন্তু ইতিহাসের ছাত্ররা অনার্স স্তরে গিয়েই জানতে পারেনসেকালে মোটেই নারীরা সম্মানজনক কোনও অবস্থানে ছিলেন না। কয়েকজন বিদূষীর অবস্থান দেখিয়ে সমাজের সামগ্রিক অবস্থাটা বোঝা কখনওই সম্ভব নয়। সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণা পরতে পরতে উন্মোচন করে প্রাচীন ভারতে নারীর ক্রমাগত অবদমনের ইতিবৃত্তকেতুলে ধরে নারীর আস্টেস্পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা শৃঙ্খলকে। প্রাচীন ভারতে নারীর এই অবনমন  অবদমনকে সবথেকে বেশি মাত্রায় তুলে ধরে ‘চাণক্য নীতি’- মতো জনপ্রিয় টেক্সট। এই নীতিমালা কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য বিরচিত হোক বা না-হোকএই টেক্সট যে আবহমান ভারতীয় মননের এক জটিল প্রতিচ্ছবিসে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ‘চাণক্য নীতি’-তে মেয়েদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছেতা আজকের দিনে পড়তে বসলে মাথা খারপ হতে বাধ্য।
চাণক্য নীতি’ অনুসারে
•  আগুনজলনারীবোকা লোকসাপ এবং রাজপরিবারকে এড়িয়ে চলাই ভাল। (মুশকিল এখানেই। এই তালিকায় ‘নারী’ অন্তর্ভুক্ত হল কীভাবে?)
• ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্থ এবং নারী— দুই বিষয়কেই পরিহার বা পরিত্যাগ করা যেতে পারে। (টাকা আর নারীচাণক্যের দৃষ্টিতে দুই- সমান।)
• এই নীতির একটি শ্লোকে বলা হয়েছেযে নারী তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়াই উপবাস করেনতিনি তাঁরা স্বামীর আয়ুকে ধ্বংস করেন। (স্বামীর সাপেক্ষ অস্তিত্ব হিসাবেই নারীর অবস্থান।)  
• চাণক্য নীতি জানাচ্ছে— পিতল পরিষ্কার করে ছাইতামাকে পরিষ্কার করে তেঁতুলনারীকে পরিষ্কার করে ঋতুস্রাবনদীর জলকে পরিষ্কার করে তার গতি।(মোটেই মেয়েদের পক্ষে সম্মানজনক নয় এমন ‘সেক্সিস্ট’ উক্তি।)
• আরও বলা হচ্ছেব্যবহার না করলে জ্ঞান নষ্ট হয়অজ্ঞানতায় পুরুষ নষ্ট হয়সেনাপতির অভাবে বাহিনী নষ্ট হয় এবং স্বামীর অভাবে নারী নষ্ট হয়। (আবার মেয়েদের স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার।)
• নারীর পরামর্শ গ্রহণ না করতেনারীর সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ‘চাণক্য নীতি
• নারী নাকি বিশ্বস্ত হতেই পারে না।
• নারীর প্রকৃতিতেই নাকি সাতটি ‘দোষ’ বর্তমান— অসত্যভাষণনির্বুদ্ধিতাহঠকারিতাছলনাঅর্থলিপ্সাঅপরিচ্ছন্নতা এবং নিষ্ঠুরতা। (এই মন্তব্যের পরে আর কী বাকি থাকে?)
• ‘চাণক্য নীতি’- উপদেশ— নারীদের চার দেওয়ালের মধ্যেই রাখুন। বাইরে কদাচ নয়।
এই নীতিমালার এহেন পুরুষতান্ত্রিক চেহারার কারণ একটাই। সেটা সেকালের যুগধর্ম। এখানে কোনও ‘ডেরোগেশন’ খোঁজা ভুল হবে। সেই কালই এমনভাবে দেখতে শিখিয়েছিল নারীকে। এই দর্শনের পিছেন কাজ কেরছিল সেকালের অর্থনীতিউৎপাদন সম্পর্করাষ্ট্রকাঠামো ইত্যাদিও। ‘চাণক্য নীতি’ সেই অধিকাঠামোরই প্রতিফলন। 
 “কোনো মানুষেরই পুরোপুরি সৎ হওয়া উচিত নয় একেবারে সরল খাড়া গাছ যেভাবে সবার আগে কাঁটা হয়সৎ মানুষ তেমনি সহজে বিপদে পড়ে”- চাণক্য
প্রাচীন পৃথিবীর সেরা দার্শনিকদের কথা বলতে গেলে অনেকের নামই বলা যাবে কিন্তু যদি বলা সেরা দার্শনিকরাজনীতিবিদঅর্থনীতিবিদতখন অনেক ভেবে একটি নামই বারবার মনে পড়বে সেটি চাণক্য এক অর্থশাস্ত্র লিখেই তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতির তাবৎ হালচাল বদলে দিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতির মতো ব্যাপারগুলোতে কনফুসিয়াস আর মোজির মতো দার্শনিকের সমপর্যায়েই ভাবা হয় তাকে শক্তিশালী মৌর্য সাম্রাজ্যের রাজা চন্দ্রগুপ্তের দরবারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চাণক্যকে ইতিহাসের সবচেয়ে চতুর মন্ত্রীদের একজন বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও শক্তিশালী নন্দ রাজবংশকে উৎখাত করে পাটালিপুত্রে মৌর্য শাসন দৃঢ় করায় তার অবদান অগ্রগণ্য

কৌটিল্য (৩৫০-২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); image source: history.com
চাণক্যকৌটিল্য নাকি বিষ্ণুগুপ্ততার প্রকৃত নাম নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে তবে অধিকাংশের মতেএই তিনটিই তার ভিন্ন ভিন্ন নাম এগুলোর মধ্যে কৌটিল্য হচ্ছে তার গোত্রের নাম মূলত ‘কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র’ বইটির জন্যই তার কৌটিল্য নামটি চলে আসছে আবার সে বইয়ের এক জায়গায় লেখককে বিষ্ণুগুপ্তও সম্বোধন করা হয় তাছাড়াচাণক্যই যে বিষ্ণুগুপ্তসে প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় অব্দের বিষ্ণু শর্মা নামক কোনো এক লেখকের ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক একটি সংস্কৃত লেখায় খুব কমসংখ্যক ইতিহাসবিদই মনে করেন যে চাণক্য এবং কৌটিল্য আলাদা ব্যক্তি আবার কেউ কেউ বলেন যে চাণক্য  কৌটিল্য একই ব্যক্তি হলেও বিষ্ণুগুপ্ত আলাদা মানুষ বিষ্ণুগুপ্তকে অর্থশাস্ত্রের সম্পাদক বলে অভিহিত করেন অনেকে
চাণক্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা শুরুর পূর্বেই উল্লেখ করা প্রয়োজন যেআজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগের ইতিহাস খুব একটা বিশুদ্ধভাবে লিখিত নেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতিহাসবিদগণের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য এবং বিতর্ক তথাপি এখানে সর্বাধিক স্বীকৃত তথ্যগুলোই সংযোজনের চেষ্টা করা হয়েছে
আনুমানিক ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ভারতের গোল্লা নামক অঞ্চলের চানাকা নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন চাণক্য তার পিতা চানিন এবং মাতা চানেশ্বরী ছিলেন ব্রাহ্মণ তাই চাণক্যও জন্মসূত্রেই ব্রাহ্মণ ছিলেন তবে জৈন ইতিহাসবিদ হেমাচন্দ্রের মতে চাণক্যের পিতার নাম ছিল চাণক যা- হোকচাণক্যের বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন তাই শৈশব থেকেই তিনি নিজের সন্তানের শিক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন সে সময় বেদকে মনে করা হতো শিক্ষাক্ষেত্রে কঠিনতম বিদ্যা বালক চাণক্য সম্পূর্ণ বেদ অর্থসহ মুখস্থ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন প্রাচীন ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমে (বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গতঅবস্থিত তক্ষশীলা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানচর্চার স্থান সেখানেই শুরু হয় চাণক্যের পড়ালেখা
তক্ষশীলা
বেদ শিক্ষা হয়ে গেলে রাজনীতি পড়তে শুরু করেন চাণক্য শৈশব থেকেই চতুর বালক চাণক্য রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতির অধ্যয়ন বেশ উপভোগ করতেন কৈশোরে পদার্পণ করেই অর্থনীতি নিয়ে লেগে গেলেন তক্ষশীলার শিক্ষকদের মধ্যে তার প্রতিভার চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই একে একে সাহিত্যযুদ্ধশাস্ত্রচিকিৎসাবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানও অধ্যয়ন করেন চাণক্য খুব সম্ভবত গ্রিক এবং ফারসি ভাষায়ও তার দক্ষতা ছিল তার রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে অনেকে তাকে অসৎ মানুষ বলে আখ্যায়িত করলেওচাণক্য ছিলেন বেশ স্বচ্ছ এক ব্যক্তি মূলত তিনি ছিলেন বাস্তববাদী ভারতীয় জীবন দর্শনের সাথে তার আত্মার বন্ধন ছিল  কথার সত্যতা পাওয়া যায় তার নীতিশাস্ত্র গ্রন্থেযেখানে তিনি আদর্শ ভারতীয় ভাবধারায় জীবন ধারণের পন্থা আলোচনা করেন
তক্ষশীলা সর্বদা সম্ভ্রান্ত এবং রাজবংশীয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকতো সেখানকার শিক্ষকগণও ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মানের জ্ঞান সম্পন্ন এবং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সেখানকার পরিবেশই এমন ছিল যেসেখানে গেলে যে কেউ জ্ঞানার্জন করবেই রাজা রাজড়াদের সন্তানদের সাথে একত্রে পড়ালেখা করে চাণক্যের মাঝেও বেশ শৌখিন মনোভাব সৃষ্টি হয় তথাপিশিক্ষা-দীক্ষা সম্পন্ন করে তিনি সঠিক পথেই পা বাড়িয়েছিলেন তিনি মনে করতেনজ্ঞানার্জন করে তা ছড়িয়ে দিতে না পারলে সে জ্ঞানঅনাহারে থাকা অবস্থায় হাঁড়িতে খাদ্য সংরক্ষণ করার মতো তাই শিক্ষকতাকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করলেন চাণক্য
ঈশ্বর  কাঠপাথর কিংবা মাটির তৈরি মূর্তির মাঝে বসবাস করেন না তিনি আমাদের আত্মায় বসবাস করেন!”- চাণক্য

চাণক্যের সবচেয়ে কাছের শিষ্য ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য দীর্ঘদিন একসাথে জ্ঞানচর্চা করে দুজনের মধ্যে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে চাণক্য চন্দ্রগুপ্তকে নীতিশাস্ত্র শেখানোর পাশাপাশি একজন দক্ষ যোদ্ধারূপে গড়ে তোলেন মহাবীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমণ করে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করার সময় চাণক্য আলেকজান্ডারের সৈন্যবাহিনীর রণকৌশল গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেন গ্রিকদের হাত থেকে সমগ্র উত্তর ভারত যখন মুক্ত করে নিচ্ছিলেন চন্দ্রগুপ্ততখন আড়ালে বসে কলকাঠি নাড়ছিলেন আদতে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত  তার বাহিনীকে যদি ধরা হয় একটি মানবদেহচাণক্য ছিলেন তার মস্তিস্কসরাসরি গ্রিকদের বিতাড়ন করা সম্ভব নয় জেনে চাণক্য একজন একজন করে আলেকজান্ডারের নিয়োগ করা ‘সার্ত্রাপ’ বা প্রাদেশিক শাসক হত্যা করার পরামর্শ দেন ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পূর্বেই উত্তর গান্ধারা তথা বর্তমান আফগানিস্তানে গ্রিকদের দাপট কমে আসে আর আলেকজান্ডারের মৃত্যুর  বছরের মধ্যেতো গ্রিকরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসনের আশাই ছেড়ে দেয়
এবার কিছু বিতর্কিতকিন্তু অতি প্রচলিত তথ্য আলোচনা করা যাক চন্দ্রগুপ্তের সাথে চাণক্যের সাক্ষাৎ ছিল অনেকটা সিনেমার মতোই নন্দ রাজবংশের শেষ রাজা ধনানন্দের দরবারে গিয়ে কোনো কারণে অপমানিত হয়ে ফেরেন চাণক্য আর সে অপমানের বদলা নিতে ধনানন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করার ছক কষেন খুঁজতে থাকেন একজন যোগ্য শিষ্যযাকে দীক্ষা দিয়ে ধনানন্দকে পরাভূত করা যাবে এরই ধারাবাহিকতায় তার সাক্ষাৎ হয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাথে দীর্ঘদিন চন্দ্রগুপ্তের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা আরো কয়েকজন আঞ্চলিক শাসকদের সাথে মিলে জোট গড়ে তোলেন একে তো ধনানন্দকে তার প্রজারা পছন্দ করতো নাতার উপর চাণক্যের চতুর রণকৌশলের সামনে টিকতেই পারলো না নন্দ বাহিনী আর এরই সাথে নন্দ বংশের পতন ঘটিয়ে চন্দ্রগুপ্তকে সম্রাট করে নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয় চাণক্যের প্রখর বুদ্ধিতে এই সাম্রাজ্য বিস্তৃতি লাভ করতে করতে পশ্চিমে সিন্ধু নদী থেকে পূর্বে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে

পাটালিপুত্র; image source: bbc.com
ফুলের সৌরভ কেবলই বাতাসের দিকে ছড়ায় কিন্তু একজন ভালো মানুষের গুণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে”- চাণক্য
চাণক্যের ব্যাপারে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় উপকথাটি উল্লেখ আছে জৈন উপকথায় সেখানে বলা হয় যেচাণক্য মনে করতেন যেকোনো দিন চন্দ্রগুপ্তের খাবারে বিষ দিয়ে তাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালাতে পারে শত্রুরা তাই চন্দ্রগুপ্তের দেহে অনাক্রম্যতা তৈরি করার লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন চন্দ্রগুপ্তের খাবারে অল্প পরিমাণে বিষ মিশিয়ে দিতেনচন্দ্রগুপ্ত অবশ্য  ব্যাপারে অবগত ছিলেন না তিনি অজ্ঞাতসারে বিষ মিশ্রিত খাবার তার গর্ভবতী স্ত্রী দুর্ধরার সাথে ভাগাভাগি করেনযিনি সন্তান প্রসব থেকে মাত্র কয়েকদিন দূরে ছিলেন বিষের প্রতিক্রিয়ায় দুর্ধরা মৃত্যুশয্যায় উপনীত হলে তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে চাণক্য দুর্ধরার পেট কেটে শিশুটিকে রক্ষা করেনএই শিশুটিই বিন্দুসারযিনি চাণক্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং চন্দ্রগুপ্তের পরে সিংহাসনে বসে চাণক্যকেই নিজের উপদেষ্টা নিয়োগ করেন।
চাণক্যের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ নিঃসন্দেহে অর্থশাস্ত্র  হাজার বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও অর্থশাস্ত্রের অনেক আলোচনা এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং ভবিষ্যতেও থাকবে এই বইটিকে একটি বিশ্বকোষ বললেও কম বলা হবে কী নেই এতেদর্শনশাস্ত্রনীতিশাস্ত্ররাষ্ট্রনীতিবাজেট ব্যবস্থাআন্তর্জাতিক সম্পর্ক (এক প্রদেশের সাথে আরেক প্রদেশের সম্পর্ক), সরকার পরিচালনার নীতিবাজার ব্যবস্থাবাণিজ্যসমরনীতিখনিজ সম্পদের ব্যবহারপরিবেশ প্রকৃতিচিকিৎসাশাস্ত্রকৃষি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় আরো যত বিষয়ে জ্ঞান থাকা প্রয়োজনসব২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই মহান দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেন কীভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেনতা নিয়ে আছে বিস্তর মতপার্থক্য সেসবের মধ্যে স্বেচ্ছামৃত্যুহত্যানির্বাসনের মতো ঘটনাও আছে
চাণক্যের দর্শনের কিছু মূল বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করে শেষ করবো
বিষ না থাকলেও সাপকে বিষধর হবার অভিনয় করতে হবে
একটি সাপকে শত্রুরা ততক্ষণ ভয় পাবেযতক্ষণ এর দাঁতে বিষ থাকবে বিষহীন সাপকে যে কেউ ঘায়েল করে ফেলবে তাই নিজেকে রক্ষার জন্য হলেও সাপকে বিষধর হবার অভিনয় করতে হবে অন্যকথায়শত্রুর নিকট নিজের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করা যাবে না
জন্ম হোক যথা তথাকর্ম হোক ভালো
এই বিখ্যাত নীতিবাক্যটি শৈশব থেকে কতবার শুনেছেনতার হিসাব আছেমাধ্যমিকে ভাব সম্প্রসারণে এই বাক্যটির কাটছাঁট করেননিএমন মানুষ পাওয়া ভার এই বাক্যটি এসেছিল দার্শনিক চাণক্যের মাথা থেকেই অবশ্য তিনি ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একথা লিখে গেছেন সে সময় রাজতন্ত্র চালু ছিল এবং রাজ দরবারেও কেবল সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোকেরাই কাজ পেত চাণক্য মনে করতেন রাজতন্ত্র চলতে পারেকিন্তু রাজ দরবারে রাজার মন্ত্রী উপদেষ্টা হতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতেবংশের পরিচয়ে নয়
পুরোপুরি সৎ হওয়া যাবে না
সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা”  নয়অন্তত সবসময় নয়এমনটিই ছিল চাণক্যের বিশ্বাস বেশিমাত্রায় সৎ এবং সরল হলে মানুষ আপনাকে ব্যবহার করবেআপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে আবার ঠোঁটকাটা সততাও কিন্তু মানুষ পছন্দ করে না আপনার আত্মীয়ের বিয়েযেখানে উপস্থিত না হলে তাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হবার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু অফিসে বিয়ের কথা বললে ছুটি পাবার সম্ভাবনা নেই তখন কি আপনার গুরুতর কোনো মিথ্যা বলা উচিতচাণক্যের উত্তর, "হ্যাঁ" তার কাছে সততা নয়বরং লৌকিকতাই সর্বোৎকৃষ্ট
যেকোনো কাজের পূর্বে তিনটি প্রশ্ন
আমি কেন  কাজটি করবোএর সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারেআমি কি আদতে সফল হবোযেকোনো কাজের পূর্বে নিজেকে এই ৩টি প্রশ্ন করার উপদেশ দিয়েছেন চাণক্য চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য পরিচালনায়ও তিনি সর্বদা এই নীতি অনুসরণ করেছেন যে কারণে প্রতিটি কাজের পূর্বে তা নিয়ে হয়েছে বিশদ গবেষণা এবং আলোচনা ফলে কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে নিপুণভাবে
ভীতি গ্রাস করার পূর্বেই একে ধ্বংস করে দাও
চাণক্যের একটি চমৎকার ভাবনা হচ্ছে ভীতি এবং সম্ভাব্য সমস্যার সমাধান যখন আপনি নিশ্চিত যে শীঘ্রই কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেনতখন সেটি শুরু হবার আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত যে ব্যাপারটি আপনাকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেননিজে ভীত হবার পূর্বেই সে ব্যাপারটি মিটিয়ে ফেলুন এটাই চাণক্যর উপদেশ উদাহরণস্বরূপআপনি ভয়ে উল্টো দৌড় শুরু করলেই কুকুর সমান আগ্রহে আপনার পিছু নেবে কিন্তু ভয় না পেয়ে আপনি নিজেই বরং কুকুরটিকে ভয় পাইয়ে দিননির্বিঘ্নে হেঁটে চলে যান!
একটি চাকা এককভাবে চলতে পারে না
চাণক্যের রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দর্শনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ভাবনা এটি তিনি একটি সরকারকে একটি দ্বিচক্রযানের সাথে তুলনা করেছেনযেখানে রাজা একটি চাকা এবং তার উপদেষ্টা  মন্ত্রীরা অপর চাকা যোগ্য  বুদ্ধিমান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীপরিষদ ছাড়া রাজা অচল আবার যথার্থ নেতৃত্বগুণ বিশিষ্ট রাজা ছাড়া মন্ত্রীপরিষদও কোনো কাজ করতে পারবে না চাণক্য মনে করতেনরাজার চেয়ে রাজার মন্ত্রীদের অধিকতর জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ হতে হবে যেন তারা রাজাকে ভুল পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারে
ফলাফলই শেষ কথা
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য চাণক্য যেসব নীতি অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো মোটেও নৈতিকতার ধার ধারে না বরং কার্যকর ফলাফল আনয়নের জন্য যত প্রকার ছল-চাতুরী প্রয়োজনসবই করতে হবে বলে মনে করতেন চাণক্য যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষ শিবিরে গুপ্তচর পাঠানোঘুষ দিয়ে উচ্চপদস্থ সেনাসদস্যদের হাত করে নেয়ামধ্যস্থতার কথা বলে ঝোপ বুঝে কোপ দেয়াশত্রুর শত্রুদের সাথে জোট বাঁধা সহ যা করা প্রয়োজন সবকিছুর পক্ষেই মত দিতেন চাণক্য এসবের বিনিময়ে ফলাফল নিজের প্রজাদের পক্ষে রাখা চাইএটিই তার মত
অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নাও
চাণক্যের আরো একটি চমৎকার দর্শন হচ্ছে অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার উপদেশ তার মতে প্রতিটি মানুষ তার জীবনে কিছু নির্দিষ্ট ভুল করবেই তবে কেবল নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শুধরে যাবার আশা করলেতা হবে দুরাশা কারণ মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকবে না বরং নিজের ভুলের সাথে সাথে অন্যদের ভুলগুলোতে নজর রাখতে হবেসেখান থেকে শিখে নিতে হবে করণীয়
শ্রেষ্ঠ গুরুমন্ত্র হচ্ছে নিজের গোপনীয়তা কারো কাছে প্রকাশ না করা”- চাণক্য

Earn Money Online

https://dailynewstimesbd.com/

Post a Comment

আপনার মেসেজের জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের সকল মেসেজ গুলি আমি দেখি, ব্যাস্ততার জন্য অনেক সময় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না, আশা করি সময় করে সবার উত্তর দিবো,, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য

Previous Post Next Post

Popular Posts