নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে ৫০ লাখ টাকা সাধা হয়েছিল: শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী



ঢাকা: কান ধরিয়ে ওঠবস করার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সঙ্গে সমঝোতা করতে পুলিশের এক কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রস্তাব দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী সবিতা হালদার।

আলোচিত এই শিক্ষককে ঘুষ গ্রহণের মামলায় কারাগারে পাঠানোর পর সাংবাদিকদেরকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান তার স্ত্রী।

বুধবার নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম অশোক কুমার দত্ত শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তিনিই আবার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান।

শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে আলোড়ন শুরু গত বছরের ১৩ মে। ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে শ্যামল কান্তির স্কুল বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাকে কান ধরিয়ে ওঠবস করান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হলে ব্যাপক তোলপাড় হয়।

সেলিম ওসমান দাবি করেন, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় শ্যামল কান্তিকে তাৎক্ষণিক সাজা দিয়ে তার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তবে পরে বিচারিক তদন্ত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে শ্যামল ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন-এমন কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর এর পর বরখাস্ত শ্যামল তার চাকরি ফিরে পান।



আবার হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনায় একটি মামলা হয় এবং পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততার ঘটনাটি। আর এই মামলায় তিনি চলতি সপ্তাহেই আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন।

শ্যামলকে লাঞ্ছিত করার দুই মাস পর নারায়ণগঞ্জ আদালতে তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে শুনানি শেষে দুটি অভিযোগ নাকচ করেন বিচারক। আর শ্যামলের স্কুলের শিক্ষিকার অভিযোগটি আমলে নিয়ে তার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তার চাকরি এমপিওভুক্ত করিয়ে দেয়ার কথা বলে শ্যামল কান্তি দুই বারে তার কাছ থেকে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

এরপর আদালতের নির্দেশে এই মামলায় তদন্ত হয় এবং বুধবার প্রতিবেদন দাখিল হয়। আর বিচারক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এই মামলায় আত্মসমর্পণের আগে সাংবাদিকদেরকে শ্যামল কান্তি বলেন, তিনি প্রভাবশালীর চক্রান্তের শিকার। ওই শিক্ষিকা যে অভিযোগ তুলেছেন, তার পুরোটাই মিথ্যা।

শ্যামল কান্তিকে হাতকড়া পরিয়ে হেটে-হিঁচরে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ। এ সময় আদালত চত্বরে নিরাপত্তাতেও ছিল অস্বাভাবিক কড়াকড়ি।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী সবিতা হালদার বলেন, ‘আমার স্বামীকে লাঞ্ছিত করার আগে এই ধরণের কোন অভিযোগ ছিল না। কিন্তু যদি এই ধরণের অভিযোগ থাকতো তাহলে তো তার বিরুদ্ধে আগেই উঠতো এবং মামলা হত।’

‘পেছনের দিনের ঘটনা সাজিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে’- বলেন সবিতা।

শ্যামল কান্তির স্ত্রী জানান, ওই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা হওয়ার পর একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদেরকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, ‘বন্দর থানার এস আই মোখলেছুর রহমান আমাদেরকে সাংসদের সঙ্গে মিলে যাওয়ার বার বার চাপ দিয়েছেন। ওই এস আই বলেছে, সাংসদ আপনাদেরকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে দেবে আপনারা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু আমার স্বামী বলেছেন আমি কেন নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাব।’

শ্যামল কান্তির স্ত্রীর এই অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে উপপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এই মামলার তদন্তে আমি ছিলাম না, আর ওই নারীকে আমি টাকা নেয়ার কথা বলিনি আবার নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে যাওয়ার কথাও বলিনি। তিনি যদি এ কথা বলে থাকেন, তাহলে তিনি মিথ্যা বলেছেন।’

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বক্তব্য জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি, এখন কথা বলা যাবে না।’
Earn Money Online

https://dailynewstimesbd.com/

Post a Comment

আপনার মেসেজের জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের সকল মেসেজ গুলি আমি দেখি, ব্যাস্ততার জন্য অনেক সময় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না, আশা করি সময় করে সবার উত্তর দিবো,, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য

Previous Post Next Post

Popular Posts