বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা ঐসব দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করতে একটি বিল মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্ন-কক্ষ লোকসভায় পাশ হয়েছে। বুধবার সেটি রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেলে বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু ২০১৪ সাল পর্যন্ত মূলত আসাম এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে চলে এসেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হবেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই বিলটি পেশ করলে পার্লামেন্টে বিরোধীদলগুলি যেমন প্রবল বিরোধিতা করেছে, তেমনই আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ১২ ঘণ্টার বনধ পালিত হয়েছে। সোমবারই এই ইস্যুতে আসাম সরকারে বিজেপি-র জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। বিজেপি-বিরোধী দলগুলি কেন এই বিলের বিপক্ষে? লোকসভায় সরকার যে বিলটি পাশ করিয়েছে, সেটি আসলে ২০১৬ সালেও একবার পেশ করা হয়েছিল। তখনও তীব্র আপত্তির কারণে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়, যারা নানা রাজ্যে ঘুরে বিভিন্ন স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সংসদীয় কমিটিতে থাকা বিরোধী দলীয় সদস্যদের বেশীরভাগ সাজেশন না মেনেই বিলটি পাশ করানো হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার সংসদে যা বলেছেন বিলটি সম্বন্ধে, তা হল: পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে সেসব দেশের হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে চলে এসেছেন, সেই দেশ থেকে নির্যাতনের বলি হয়ে, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে চলতি আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে বসবাস করার পরে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে নিয়ম ছিল, সেটাও কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। প্রথম থেকেই আসামের মানুষ এবং অসমীয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলি এই বিলের বিরোধিতা করছে। এখন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এমনকি বিজেপির শরিক দল শিবসেনাও এই বিলের বিরোধিতা করেছে। অসমীয়াদের বক্তব্য হল: ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান এই নাগরিকত্ব বিলের। চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যে কেউ আসামে এসেছেন, তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে, যে কারণে কয়েক বছর ধরে ঐ রাজ্যে নাগরিক পঞ্জী তৈরির কাজ চলছে। ছবির কপিরাইটNURPHOTO Image caption আসামে মুসলমানদের ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। অসমীয়া দলগুলি বলছে, এই বিলের মাধ্যমে আসলে বিজেপি আসামে ভোটের অঙ্ক খেলতে চাইছে। বাংলাদেশ থেকে আসামে যে অনেক হিন্দু চলে এসেছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া গেলে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক জোরদার হবে। ঘটনাচক্রে নাগরিক পঞ্জীথেকে যে লাখ লাখ হিন্দু বাঙালীর নাম বাদ পড়েছে, তাদেরও বিজেপি এটাই বোঝাচ্ছে যে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে গেলে তারা ভারতীয় হয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু নাগরিক পঞ্জী থেকে যে কয়েক লক্ষ মুসলমান বাদ পড়েছেন, তাদের যে কী হবে, তা নিয়ে কোনও কথা বলে নি বিজেপি।
Tags:
• অপরাধ