শিশুটি গর্ভপাত ঘটাতে পারবে?



ভারতে ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের এক অন্তঃসত্ত্বা শিশু গর্ভপাত ঘটাতে পারবে কি না—এ বিষয়ে পরীক্ষা করতে চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

পাঞ্জাব রাজ্যের চণ্ডীগড়ে ১০ বছরের শিশুটির গর্ভপাত করার অনুরোধ জানিয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তার মা-বাবা। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটি গত সাত মাসে তার মামার দ্বারা একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়। সে এখন ২৬ সপ্তাহের (৬ মাস) অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশ শিশুটির মামাকে গ্রেপ্তার করেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুর শরীর মোটেও সন্তান ধারণের উপযোগী নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুটির বাবা একজন নিম্নশ্রেণির সরকারি কর্মচারী, মা গৃহকর্মী। দরিদ্র পরিবারের এই শিশুটি গত সাত মাসে তার মামার দ্বারা একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শিশুটি ভয়ে এ ঘটনা কাউকে জানায়নি। গত মঙ্গলবার পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে মা-বাবা তাকে চণ্ডীগড় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, শিশুটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার শরীর সন্তান ধারণের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। এ কারণে শিশুটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে গর্ভপাত করানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন শিশুটির মা-বাবা। কিন্তু গত সপ্তাহে চণ্ডীগড় জেলার আদালত ওই আবেদন খারিজ করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা।


বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার ও ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ১৫৫ মিনিটে ১৬ বছরের নিচের একজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। আর প্রতি ১৩ ঘণ্টায় ১০ বছরের নিচের একজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৫ সালে ১০ হাজারের বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশটিতে ২৪ কোটি নারী রয়েছেন, যাদের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে। ৫৩ দশমিক ২২ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিশুই পরিচিত ও কাছের মানুষদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।





শিশুটির আইনজীবী অলক শ্রীবাস্তব বলেন, পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সন্তান ধারণের জন্য শিশুটির তলপেটে থাকা হাড় এখনো সেভাবে গঠিত হয়নি। এ কারণে অনাগত সন্তান ও তার মায়ের জীবন খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ১০ বছর বয়সী ওই শিশুটি স্বাভাবিক প্রসব বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলেও তা ঝুঁকিপূর্ণ।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, একজন মনোরোগ চিকিৎসক ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি শিশুটি জানে না, বোঝেও না। এর কারণে যে তার শরীরে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটাও সে বোঝে না।

ভারতীয় আইনে অন্তঃসত্ত্বার ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ। নারী-পুরুষের আনুপাতিক বৈষম্য কমাতে এই কঠোর আইন করা হয়েছে। ভারতের সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিনের গেড়ে বসা প্রথা অনুযায়ী, দেশটিতে ছেলেসন্তানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যার কারণে বছরের পর বছর লাখ লাখ মেয়েশিশুর ভ্রূণ হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০ সপ্তাহ পর ভ্রূণের লিঙ্গ জানার পর এসব হত্যার ঘটনা ঘটে বলে আরোপ করা হয় ওই নিষেধাজ্ঞা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ বিষয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়। এই পিটিশন দাখিল করা ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা কয়েকজন নারী রয়েছেন, যাঁরা ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত করাতে চান। এ বিষয়টি আদালত সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়ে থাকেন।

এর আগে চলতি মাসেই ভ্রূণের ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। অস্বাভাবিক ভ্রূণের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত এ অনুমতি দিয়েছিলেন।

গত মে মাসে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের রোহতাকে সৎবাবার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া ১০ বছর বয়সী এক শিশুর গর্ভপাত ঘটানো হয়। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (পিজিআইএমএস) চিকিৎসকেরা শিশুটির গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
Earn Money Online

https://dailynewstimesbd.com/

Post a Comment

আপনার মেসেজের জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের সকল মেসেজ গুলি আমি দেখি, ব্যাস্ততার জন্য অনেক সময় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না, আশা করি সময় করে সবার উত্তর দিবো,, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য

Previous Post Next Post

Popular Posts