প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেরিন ড্রাইভের যাত্রা শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার উখিয়া উপজেলায় ইনানী বিচের এই মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন তিনি।
ইনানীতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাস্তবায়িত (সম্প্রতি সমাপ্ত) কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের যাত্রা শুরু হলো আজ থেকে। প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম মেহেদী হাসান জানান, এটি বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ (সাগরপারের সড়ক), যেটির দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার।
মেরিন ড্রাইভ সড়কে ১৭টি ব্রিজ, ১০৮টি কালর্ভাট রয়েছে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো এশিয়া মহাদেশের অহংকার। এতে করে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প এগিয়ে গেলো আরো কয়েক ধাপ।
প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আলহাজ্জ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত এ চেপে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি। দুপুরে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ অর্থাৎ সাগরপারের সড়ক। এর এক পাশে থাকছে নীল সমুদ্রের হাতছানি, অন্য পাশে থাকছে সবুজে ঘেরা বন-বনানী ও পাহাড়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই সড়কটিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে সহজে কক্সবাজারে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন সুপরিসর বোয়িং বিমানও সেখানে ওঠানামা করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এই মেরিন ড্রাইভ, বোয়িং বিমানের চলাচল ও পাঁচটি ভবন উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে ৯টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে নাফ নদের পাশে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজারকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তা একসময় দেশের চেহারাই বদলে দিতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক পর্যটন সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত রেলওয়ে নির্মাণের কাজও ত্বরান্বিত করতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়ন করতে হবে। জেলার সোনাদিয়া, মহেশখালীরও রয়েছে বিপুল পর্যটন সম্ভাবনা। সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের বিকাশমান পর্যটন খাতের বেসরকারি উদ্যোগগুলো যাতে সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
পর্যটন খাতে আমাদের যেসব সম্ভাবনা রয়েছে, অনেক দেশেরই তা নেই। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বিপুল জীববৈচিত্র্য রয়েছে সুবিশাল হাওরাঞ্চল এবং দেশকে জালের মতো জড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী। তার পরও কেন আমরা পর্যটন খাতে পিছিয়ে থাকব? উপযুক্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আজ যে যুগান্তকারী পদক্ষেপের সূচনা করছেন, আমরা আশা করব, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী একটি পর্যটন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।